নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫ | বুধবার | সকাল ৭:৫২
খুলনার কয়রা উপজেলার মহিলা কলেজের দুই প্রভাষকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোলের প্রভাষক মোঃ আক্তারুজ্জামান ও ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনার প্রভাষক শাহিন আরার বিরুদ্ধে পাঠদান না করে বেতন তোলার অভিযোগ উঠেছে।
কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, কলেজের ইনচার্জ ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির সহযোগিতায় মোঃ আক্তারুজ্জামান ও শাহিন আরা দীর্ঘদিন কলেজে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রভাষক মোঃ আক্তারুজ্জামান খুলনা -০৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডঃসোহরাব আলী সানা ও খুলনা-০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন এবং প্রভাষক শাহিন আরা কয়রা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহসিন রেজার শ্যালকের স্ত্রী হওয়ায় ইতিপূর্বে তাদের ব্যপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনি।২০২১ সালে কয়েকটি পত্রিকায় তাদের এসব কর্মকান্ড নিয়ে লেখালেখি করলেও তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
কয়রা উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজটি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে শাহিন আরা এবং মোঃ আক্তারুজ্জামান ২০০১ সালের ১ নভেম্বর কলেজে যোগদান করেন।২০১১ সালের ১ নভেম্বর বেতন চালু হয় এবং ৩০ মার্চ ২০১৬ সালে জাতীয়করণ হয় ।
কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বলেন,আমরা মোঃ আক্তারুজ্জামান স্যারকে কখনো দেখিনি। তবে জহুরুল স্যার শাহিন আরা ম্যাডামের ক্লাস নেন এবং মাঝেমধ্যে ম্যাডাম কলেজে আসে বলে জানান দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাহলে ভূগোলের ক্লাস কে নেন?এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন,সমদান্ত মন্ডল স্যার আমাদের ক্লাস নেন।
কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রুপা বলেন, শাহিন আরা ম্যাডাম কখনও আমাদের ক্লাস নেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, মোঃ আক্তারুজ্জামানকে ইনচার্জ সাহেব একটু সুযোগ সুবিধা দেন। তিনি কলেজ জাতীয়করণের অনেক ভূমিকা রেখেছে।তবে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরে আমরা স্যারেকে কলেজে আসতে বলেছি কিন্তু তিনি এখনও আসেনি।তবে শাহিন আরা ম্যাডামের বিষয়টি অন্যরকম। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহসিন রেজার শ্যালকের স্ত্রী হওয়ায় নিজের ইচ্ছামতো আসেন।এসব কারণে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় এবছর একজন ছাত্রী ও ভর্তি হয় নি। কলেজের বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও কাগজপত্রে আক্তারুজ্জামানের স্বাক্ষর অফিস সহকারী সুভাষ করে দেয়। সবকিছু দেখেও আমাদের না দেখার ভান করে থাকতে হয়।
ইনচার্জ সাহেব আমাকে বললে তো আমাকে বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর করতে হবে বলে জানান সহকারী সুভাষ চন্দ্র।
এ বিষয়ে জানতে প্রভাষক আক্তারুজ্জামানকে একাধিক ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শাহিন আরা বলেন,আমি খুলনাতে থাকি, তবে সপ্তাহে ২-৩ দিন কলেজে যাই। তবে ক্লাসে নিয়মিত পাঠদান না করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের কথা বললে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের ইনচার্জ আমিনুর রহমান বলেন, আক্তারুজ্জামান কলেজের কাজে ঢাকায় থাকেন,তিনি একাডেমিক কাজ ভালো বোঝেন।
ইতিপূর্বে ২০২১ একাধিক পত্রিকায় পাঠদান না করে বেতন ভাতা গ্রহণের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।তবে সেটি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান না করে বেতন তোলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, খুলনা জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আমাদের এখানে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বেশি হয়। শিক্ষকদের হাজিরার ডকুমেন্ট রাখা হয় কি না জানতে চাইলে না বলে উত্তর দেন।
তবে তিনি বলেন,একজন শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে অন্য শিক্ষক সেই ক্লাস নেন।তবে সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক(কলেজ)মোঃ এস কে মোস্তাফিজুর বলেন,বিনা ছুটিতে কোন শিক্ষকের একদিনও অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই।এ বিষয়ে আমার জানা নেই।আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।